ঊদ: সুগন্ধের রাজকীয় উপাদান

এটি Aquilaria গাছের হৃদকাঠে বিশেষ এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণের ফলে তৈরি হয়। এই সংক্রমণের ফলে গাছ প্রতিরক্ষামূলক এক ধরণের সুগন্ধি রেজিন উৎপন্ন করে, যা কাঠকে গাঢ় রঙের, ভারী ও সুগন্ধযুক্ত করে তোলে। প্রাকৃতিকভাবে সংক্রমিত আগরউড পাওয়া বিরল, তাই এটি অত্যন্ত মূল্যবান এবং দুষ্প্রাপ্য।

বর্তমানে ঊদের বাজার মূল্য অসাধারণ। শীর্ষ মানের প্রাকৃতিক আগরউড প্রতি কেজি ১০০,০০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি হতে পারে। তবে এর বিশুদ্ধতা, গাছের বয়স, উৎপত্তিস্থল এবং প্রক্রিয়াকরণের ওপর নির্ভর করে এর মান ও মূল্য পরিবর্তিত হয়।

১৯৫০-এর দশকে সিলেটে আগর তেল উৎপাদনের কারখানা স্থাপিত হয়, যা কালের পরিক্রমায় বৃহৎ শিল্পে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আগরউড আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমানের হিসেবে স্বীকৃত। এখানকার মাটি ও জলবায়ু Aquilaria malaccensis গাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত হওয়ায়, সিলেট বিশেষভাবে আগরউড উৎপাদনের জন্য পরিচিত। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলসহ পুরো সিলেট বিভাগে আগরগাছের চাষ এবং আগর তেল উৎপাদন একটি সুপ্রাচীন ও সমৃদ্ধশালী শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে।

আগরউডের সুগন্ধের বৈশিষ্ট্য

আগরউডের সুবাস অত্যন্ত জটিল, গভীর এবং বহুমাত্রিক। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এবং বিভিন্ন স্তরে অনুভূত হয়। সাধারণত আগরউডের ঘ্রাণকে নিম্নলিখিত কয়েকটি পর্যায়ে ব্যাখ্যা করা যায়:

১. প্রথমিক সুবাস (Top Notes)

প্রথমে ধোঁয়া-মিশ্রিত হালকা মিষ্টি ও মসৃণ কাঠের গন্ধ পাওয়া যায়।

কিছু ক্ষেত্রে মৃদু মধুর বা ফলের মতো সুবাসও পাওয়া যেতে পারে।

উন্নতমানের আগরউডে এক ধরনের সবুজ বা তাজা গাছের ছাল ও মাটির গন্ধও থাকতে পারে।

২. মধ্যম স্তরের সুবাস (Heart Notes)

ধূপের মতো গভীর, মৃদু মসলাদার ও উষ্ণ সুবাস প্রকাশ পায়।

কিছু জাতের আগরউডে মৃদু ফুলেল বা চামড়ার মতো সুগন্ধ পাওয়া যায়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়াটে, কস্তুরি ও মধুরতার সংমিশ্রণ তৈরি হয়।

৩. গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সুবাস (Base Notes)

দীর্ঘক্ষণ পর সুবাস আরও গভীর ও রহস্যময় হয়ে ওঠে।

ভেজা মাটি, পুরাতন কাঠ, মশলা, ও মৃদু ভ্যানিলা বা মধুর মতো নরম উষ্ণতার অনুভূতি দেয়।

কিছু প্রিমিয়াম মানের আগরউডে পশুর কস্তুরি, তামাক বা শুষ্ক কাঠের মতো সুগন্ধ অনুভূত হয়।

সুবাসের বৈচিত্র্য অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়

আগরউডের ঘ্রাণ এর উৎস, সংক্রমণের বয়স এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর নির্ভর করে বদলে যেতে পারে:

* বাংলাদেশের (সিলেটি) আগরউড – ধোঁয়াটে ও মিষ্টি কাঠের নোটের সঙ্গে মৃদু ফুলেল সুবাস।

* ভারতীয় আগরউড – উষ্ণ, মসলা-মিশ্রিত এবং হালকা মধুর গন্ধযুক্ত।

* কাম্বোডিয়ান আগরউড – ফলের মতো মিষ্টি ও কম ধোঁয়াটে।

* ভিয়েতনামি আগরউড – মৃদু ফুলেল ও উষ্ণ, কস্তুরির ছোঁয়া রয়েছে।

* মধ্যপ্রাচ্যের আগরউড (আরবীয় ও ওমানি) – ভারী, ধোঁয়াটে ও চামড়ার মতো গভীর সুবাস।

অর্ডার করতে ভিজিট করুন: https://www.hanssbd.com/.../agar-wood-oil-100-natural-eo1...

আগরউডের সুগন্ধ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও সমৃদ্ধ হয় এবং একে "জীবন্ত ঘ্রাণ" বলা হয় কারণ এটি শরীরের তাপের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। এজন্যই এটিকে সুগন্ধি শিল্পের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।